Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য অর্জনে কৃষি ক্লাবের গুরুত্ব

বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯৮১ সনে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা আর প্রতিপাদ্য নিয়ে। ১৯৪৫ সনের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO (Food and Agricultural Organisation) প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান, দরিদ্র ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে  FAO  তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ পৃথিবীর প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এখন প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যের অভাবে দরিদ্রের কষাঘাতে ধুঁকে মরছে। তাইতো FAO চেষ্টা  চালাচ্ছে ২০১৫  সনের মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে, খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি , দরিদ্রতা, অসম খাদ্য বণ্টন ইত্যাদির কারণে এটি ২১৫০ সালের আগে অর্জিত হবে না বলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রধান জানান।

মানুষ এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে খাদ্যের অধিকার নিয়ে। আর এ অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশ নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে তা বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। তবে খাদ্যের সঙ্গে কৃষির সম্পর্কটি  অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, যদি কৃষিকে বাদ রেখে আমরা খাদ্যের কথা বলি তবে বিষয়টি হবে অযৌক্তিক। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিপাদ্যÑ পাবিবারিক কৃষি : প্রকৃতির সুরক্ষা, সবার জন্য খাদ্য বিষয়টি খুবই যথার্থ ও সময় উপযোগী। এবারের প্রতিপাদ্য বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আর প্রতিপাদ্যে সবার জন্য খাদ্য বিষয়টি অন্তর্নিহিত রয়েছে।
কৃষি প্রধান এ দেশে ১ কোটির ওপর বসতবাড়ি রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বসতবাড়িগুলো শুধুই আবাসস্থল নয় বরং একেকটি কৃষি, মৎস্য, পশু, হস্ত ও কুটির শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের দেশের আবাসস্থলগুলোতেই মূলত শাকসবজি, মসলাজাতীয় ফসল, ভেষজ, ঔষধি, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মৎস্য প্রকৃতি চাষাবাদ হয়ে থাকে। কৃষকদের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে এসব সম্পদ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার কার্যক্রম সফল করা সম্ভব যদি কৃষকদের ধ্যান ধারণা চিন্তার কাক্সিক্ষত পরিবর্তন করে এসব বসতভিটা কার্যকরী তথ্য নির্ভর জ্ঞান দ্বারা পরিচর্যা করা যায়। এ কার্যক্রম সফল হলে দেশের পুষ্টি ঘাটতি দূরীকরণ সম্ভব সঙ্গে সঙ্গে কুটির শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে। এতে কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নসহ ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষক পরিবার হবে স্বাবলম্বী। দেশের পতিত জায়গার সুষ্ঠু ব্যবহার করে সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ দেশের কৃষি ক্লাবগুলো জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের দেশে সরকারি বা বেসরকারিভাবে নানা নামে কৃষি ক্লাব গড়ে উঠেছে। কৃষি ক্লাবগুলো মূলত কৃষি সম্প্রসারণ এবং আয়বর্ধনমূলক কাজ করে থাকে। এগুলো গড়ে ওঠার মূল কারণ উদ্ভাবিত প্রযুক্তি, তথ্য বা সেবা যথাসময়ে সাধারণ জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া এবং তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বাংলাদেশের কৃষিকে ডিজিটাল কৃষি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের  কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক পরিচালিত কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র নামে সক্রিয় কৃষি ক্লাব গঠিত  হয়েছে। যেখানে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ওয়েব ক্যাম, মোবাইল সেট ও সিম, মডেম ও ইন্টারনেট সিমসহ আরও অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

পারিবারিক কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণে কৃষি ক্লাবের গুরুত্ব
১. যেহেতু  দেশের বৃহৎ জনসংখ্যার প্রধান পেশা কৃষি। তাই কৃষি প্রযুক্তিগুলোর কাক্সিক্ষত সম্প্রসারণ সেবা প্রচলিত সম্প্রসারণ পদ্ধতি দ্বারা সম্ভব নয়। তাই কৃষি ক্লাবগুলো সম্প্রসারণ সেবার ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া  কৃষকদের সমবায় জ্ঞান না থাকা এবং কৃষি সমবায় ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধক। আইলের কারণে কৃষকের জমি বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো থাকে। তাই ইচ্ছা থাকলেও মূলধনের অভাবে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি বা উপকরণ কোনোটিই কাজে লাগাতে পারে না। কৃষি ক্লাব যেহেতু উন্নত কৃষি কলাকৌশলের কেন্দ্রবিন্দু সেহেতু সদস্যদের সমবায়ভিত্তিক কৃষি কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা সহজ হবে ফলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে।

২. আমাদের দেশে অধিকাংশ কৃষকই অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত। তাই প্রচলিত সম্প্রসারণ কার্যক্রম দ্বারা তাদের শিক্ষিত করা দূরূহ। যেহেতু কৃষি ক্লাবের সদস্যরা স্থানীয় সেহেতু তারা তাদের প্রকৃত সমস্যা যেমন তুলে ধরতে পারবে তেমনি তথ্য সহজে নিজেদের আঞ্চলিক ভাষায় কৃষকদের বোঝাতে সক্ষম হবে।

৩. মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রাদুর্ভাব কমাতে, সময়মতো কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি) প্রাপ্যতার তথ্য প্রদানে, পণ্য পরিবহন জ্ঞানের উন্নয়নে, কৃষি বাজার সম্পর্কে কৃষকের জ্ঞান উন্নয়নে কৃষি ক্লাব ভূমিকা রাখতে পারে।

৪. দেশে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ব্যবস্থা এখন ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। যেহেতু কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে উৎপাদন প্রচলিত চাষ পদ্ধতি অপেক্ষা বেশি। এ কারণে কৃষি ক্লাব সদস্যদের যদি আমরা এ সম্পর্কে বুঝাতে পারি তবে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং গ্রহণ ও প্রচারণায় তাদের কাজে লাগানো যাবে। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা যেমন বাড়বে সঙ্গে সঙ্গে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে এবং শিল্পের কাঁচামাল প্রাপ্যতা নিশ্চিত  হবে।

৫. কৃষকের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা এবং কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারও খুব কম বিধায় ক্লাব সদস্যরা তা দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে পারে। এর ফলে কৃষক সমাজের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে যা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়ক। তাছাড়া বেকার জনগণের বিকল্প কাজের সংস্থান হবে এর ফলে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। যেহেতু সদস্যরা এখান থেকে কম সুদে ঋণ নিতে পারে ফলে তারা তাদের সুবিধামতো ফসল ফলাতে পারবে এবং কৃষি উপকরণ সময় মতো কিনতে পারবে। ফলে অধিক উৎপাদন যেমন হবে তেমনি খাদ্য নিরাপত্তাও বাড়বে।

৬. ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কৃষকদের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি ক্লাবের প্রশিক্ষিত সদস্যরা প্রশিক্ষণ দেবে যাতে ফসলের উৎপাদন বাড়তে পারে। এর ফলে কৃষকের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে হলে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত দেশের বিভিন্ন এলাকার জন্য বিভিন্ন স্ট্রেস টলারেন্স  ফসলের জাত যেমন- খরা, বন্যা, লবণাক্ততাসহিষ্ণু জাত সম্প্রসারণে সদস্যরা ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ একটি জাত অতি সহজে সম্প্রসারণ করা যায় না। কৃষি ক্লাব সদস্যরা যেহেতু স্থানীয় কৃষক তাই গবেষণালব্ধ এসব জাত সাধারণ জনগণের হাতের কাছে পৌঁছাতে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

৭. বসতবাড়ির পরিমাণ বাংলাদেশে প্রায় ১৮৪৯০০০ একর। এত বড় কৃষি ইউনিটকে যদি কার্যকরী করতে চাই তবে দরকার উন্নত কৃষি জ্ঞান আর তা সম্প্রসারণের জন্য আমরা কৃষি ক্লাবকে কাজে লাগাতে পারি। আন্তঃকৃষি ক্লাব যোগাযোগ করে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে এক জায়গার ভালো প্রযুক্তি অন্য জায়গায় বিস্তার ঘটবে, ফলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে।

খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে হলে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে আর এজন্য উষ্ণ আবহাওয়াসহিষ্ণু যেমন- ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার, ইত্যাদি ফসলের আবাদ করতে হবে। এ ফসল সম্প্রসারণে কৃষি ক্লাব কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানের দিক থেকে কৃষি ক্লাব সদস্যরা এগিয়ে থাকে। আর শস্য বহুমুখীকরণ কার্যক্রমে মন্থরতা দূর করতে সহায়ক হবে।

৯. কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্র্তৃক নির্মিত যুগোপযোগী কৃষি তথ্যভিত্তিক বিনোদনমূলক ডকুড্রামা প্রচারণায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে। এর ফলে সরকারি কৃষিবিষয়ক তথ্য দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটবে। এর ফলে কৃষক উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণে এগিয়ে আসবে এবং অধিক খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক হবে।

১০. খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে হলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। শুধু ধানের ওপর নির্ভরশীল থাকলে কখনও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন হবে না। এজন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ভুট্টা, গম ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রচারণা চালিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি ক্লাব ভূমিকা রাখতে পারে।

কৃষিবিষয়ক তথ্য সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং রেডিওতে প্রচার হয় কিন্তু কৃষক তার বিভিন্ন সমস্যার জন্য তা দেখতে বা তথ্য ভালোভাবে বুঝতে পারেননা। এগুলো প্রচার করে কৃষি ক্লাব কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এছাড়া স্কুল, মাদরাসা ও কলেজের শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম অর্থাৎ স্থানীয় গণ্যমান্য মানুষ কৃষি সম্পর্কে জ্ঞান ও প্রযুক্তি এখান থেকে পেতে পারেন এবং তারা কৃষি উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারবেন। কারণ দেশের সব মানুষের সহযোগিতায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে।

একটি কথা অনস্বীকার্য, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন হলে দারিদ্র্যবিমোচন হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ খাদ্য নিয়ে বেশ সচেষ্ট। খাদ্যাভাবের কারণে সরকার পতনের নজির আমেরিকা মহাদেশের হাইতিতে দেখা গেছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে ধান গম ছাড়াও অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ টন মাছ, মাংস, ডিম, ফল-মূল, শাকসবজি জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এ ভয়াবহ পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যাচ্ছে প্রচলিত কৃষি বাদেও আমাদের আরও কিছু করতে হবে। এজন্য শুধু মাঠ ফসলের দিকে তাকিয়ে না থেকে পারিবারিক কৃষির দিকেও নজর দিতে হবে।
 
কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি
* আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক অফিস, রাজশাহী

COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon